প্রকাশিত: ১৫/০৯/২০১৮ ৭:২৫ এএম

রাবেয়া বেবী::
তখন শিউলি আক্তার পাপড়ি চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় থেকে সাইকোলজিতে অনার্স শেষ করে একই বিশ্ববিদ্যালয়ে ক্লিনিক্যাল সাইকোলজিতে মাস্টার্সে ভর্তি হন। সে সময় দেশে রোহিঙ্গা শরণার্থীরা আসতে শুরু করে। শিউলির বড়ভাই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্লিনিক্যাল সাইকোলজির শিক্ষার্থী ছিলেন। তিনি শিউলিকে প্রস্তাব দেন, এখন রোহিঙ্গা শরণার্থীদের মানসিক অবস্থা পরিবর্তনে আমরা ভূমিকা রাখতে পারি। তুইও ইচ্ছা করলে চেষ্টা করতে পারিস। তার কথা মতো বিডিজবস দেখে আবেদন করেন শিউলি। একটি উন্নয়ন সংস্থায় সাইকো সোশ্যাল সাপোর্টার হিসেবে তার চাকরি হয়। শুরুর দিকে এমন দুর্গম পাহাড়ে কাজ করা ছিল তার জন্য বড় চ্যালেঞ্জ। সেখানে খাবার পানি ছিল না। টয়লেট ব্যবস্থা ছিল না। ছিল না পর্যাপ্ত নিরাপত্তা। রোহিঙ্গারা তখনও তাদেরকে স্বাভাবিকভাবে নিত না। তাই তাদের সাথে কথাই বলতে চাইতো না। এই অবস্থা থেকে আজ শিউলি নিজেকে রোহিঙ্গা ক্যাম্পে অভ্যস্ত করে ফেলেছেন। সাত মাস কাজ করে পূর্বের চাকরি ছেড়ে আরও বড় প্রতিষ্ঠানে রোহিঙ্গাদের সাইকো সোশ্যাল কাউন্সিলার হিসেবে কাজ করছেন।

ছেলেবেলা থেকে কী কাউন্সিলার হিসেবে কাজ করার ইচ্ছা ছিল?— এমন প্রশ্ন করলে জানান- না। তবে মেডিক্যালে পড়ার ইচ্ছা ছিল তার। রাজশাহী ডেন্টাল কলেজে পড়ার সুযোগ হলেও বাবা তাকে সেখানে পড়তে যেতে দেননি। বাবার ওপর রাগ করেই শিউলি এক পর্যায়ে সাইকোলজিতে ভর্তি হন। এখন রোহিঙ্গাদের নিয়ে কাজ করে আত্মনির্ভরশীল হয়েছেন শিউলি। শিউলি বলেন, বাড়িতে আমি শুধুই লেখাপড়া করতাম। চট্টগ্রাম থেকে কক্সবাজরে এসে আমাকে বাসা ভাড়া নেওয়া, বাজার করা, রান্না করা, পরিষ্কার পরিচ্ছন্নতার কাজ সবই করতে হচ্ছে। পাশাপাশি সময়মত অফিসও করতে হচ্ছে। এমন সব চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা করে যখন একজন মানুষের জীবনেও স্বস্তি ফিরিয়ে আনতে পারি তখন খুব ভালো লাগে বলে জানান শিউলি। শিউলি বলেন, যখন কেউ আমার কাউন্সিলিং শেষে ভালো হয় আর আমাকে বলে আপনার সাথে কথা বলে অনেক ভালো লাগছে। তখন সত্যিকার অর্থেই কাজের স্বীকৃতি পাই। আমারও তখন তার মতোই ভালো লাগছে বলতে ইচ্ছা করে। ভবিষ্যত্ নিয়ে কি ভাবছেন?— এমন প্রশ্ন করলে জানান- রোহিঙ্গা শিবিরের মতো একটি পরিবেশে কাজ করে মনে হচ্ছে আমি যে কোনো স্থানে যে কোনো পরিস্থিতিতে কাজ করতে পারবো। একটি ভালো মানের আন্তর্জাতিক বিশ্ববিদ্যালয় থেকে মাস্টার্স ও পিএইচডি করার স্বপ্ন দেখেন শিউলি।

পাঠকের মতামত